নন্দন নিলেকনি যিনি আধার প্রকল্পের সিইও ছিলেন, প্রথম আধার প্রকল্প শুরু করার সময়ে বলেছিলেন যাদের কোনো পরিচয়পত্র নেই তাদের জন্য এই আধার, অথচ এখন দেখা যাচ্ছে যারা কোনওরকম পরিচয়পত্রহীনদের তালিকায় ছিলেন তারা সেই একই জায়গায় আছেন এবং আরো বহু মানুষ সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। ৭ই জুলাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত আধার কার্ড বিষয়ে জনশুনানি নিয়ে লিখছেন সুমন সেনগুপ্ত।
১। হিঙ্গলগঞ্জ থেকে এসেছিলেন শ্যামল গায়েন।এনআরইজিএ প্রকল্পে কাজ করেছেন, কিন্তু আধার নেই বলে টাকা পাচ্ছেন না। তিনি নিজে আরো উদাহরণ দিলেন ওঁরই প্রতিবেশী বিজয় মণ্ডল ২০০ টাকা খরচ করে টাকা পাওয়ার জন্য আধার বানিয়েছেন। শ্যামল সন্দেহ প্রকাশ করেন – এটা আসল না নকল আধার?
২। হাওড়া, সাঁকরাইল থেকে আসা বিলকিস বেগম বলছিলেন প্রায় ৫০ লক্ষ জরি শ্রমিক আছেন তাদের মধ্যে ২২০০০ জন মাত্র আধার করতে পেরেছেন, তাও ৫০০ টাকা খরচ করে। তাহলে অন্যদের কী হবে? তারা কি ব্যাঙ্কে টাকা পাবে না? তারা কি সরকারি সুবিধা পাবে না? প্রসূতিকালীন ভাতা বা মাতৃযানের সুবিধা পেতে গেলেও আধার লাগছে। বিলকিসের বক্তব্য শুনে প্রশ্ন জাগে তাহলে কি আধার মানুষকে চিহ্নিত করার নাম করে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত?
৩। উত্তর দিনাজপুর থেকে এসেছিলেন ধনেশ্বর বর্মন, বলছিলেন কালিয়াগঞ্জ স্টেট ব্যাঙ্কে আ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে হয়রানির কথা, তারপর দালাল চক্রের মাধ্যমে ২০০ টাকা দিয়ে আ্যাকাউন্ট খোলার কথা। তিনি আরও জানালেন হঠাৎই দেখেন তার অ্যাকাউন্টের মোট ৩৬০০০ টাকার মধ্যে ১২০০০ টাকা আ্যাকাউন্ট থেকে বেরিয়ে গেছে যা অনেক চেষ্টা করেও তিনি ফেরত পাননি।
৪। পশ্চিমবঙ্গে যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির তরফ থেকে আসা সন্ধ্যা রায় জানালেন যে বিভিন্ন যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদের নির্দিষ্ট পিতৃপরিচয় না থাকায় তারা কি তবে সমাজের মূলস্রোতে আসতে পারবে না? আধার নেই বলে তারা স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। তারপর বিভিন্ন দালাল ধরে আধার কার্ড তৈরি করেছেন, এবার বুঝতেও পারছেন না সেটা আসল না নকল। আগে হলে তাঁরা ঊষা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের কাগজ দেখিয়ে পরিচয়পত্র তৈরি করতেন, এখন পারছেন না। যার ফলে সরকারি কোনো সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিতই থাকছেন, তা সে হাসপাতালে চিকিৎসাই হোক বা ভোটাধিকারের মতো গণতান্ত্রিক অধিকার। সন্ধ্যা স্পষ্টই জানালেন – সকলের সুবিধার কথা ভেবে এই আধার তুলে দেওয়াই ভালো।
৫। পুরুলিয়া থেকে আসা উত্তম গায়েন বলছিলেন তিনি লক্ষ করেছেন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার দীর্ঘদিন ধরে চেনা সত্ত্বেও এখন অনেক ব্যক্তিকে বলছেন আধারের সঙ্গে তাদের হাতের ছাপ মিলছে না, ফলে তাদের টাকা তোলার সমস্যা হচ্ছে। তারও বক্তব্য আধার অবিলম্বে বাতিল করা হোক, না হলে আগামী দিনে এটা ভয়াবহ আকার নেবে। খেটে খাওয়া মানুষজন তার নিজের কষ্টার্জিত টাকা তুলতে পারবেন না।
একদিকে যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন কোনো সরকারি প্রকল্পে আধার বাধ্যতামূলক নয়, কোনো ব্যাঙ্ক, বা অন্যান্য জায়গায় আধার দিতে হবে না, তখন আমাদের রাজ্যেই বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পে আধার বাধ্যতামূলক ভাবে জমা করতে হচ্ছে, যারা করছেন না তারা সেই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপরে উল্লেখিত এরকম বেশ কিছু ঘটনার কথা জানা গেল গত ৭ই জুলাই কলকাতায় #এআইপিএফ #দশথেকেদশহাজার ও #খাদ্য-ও-কাজের অধিকার অভিযান-এর পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল আধার নিয়ে ” জনশুনানি “-তে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ এতে অংশ নেন। এই শুনানিতে মূল বক্তা ছিলেন জনবিরোধী আধারের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টিকারী ড: অনুপম সরাফ, রীতা ব্যানার্জি।
“ব্যাঙ্ক, যার সঙ্গে আপনার এতো দিনের সম্পর্ক সে হঠাৎ বলছে আপনাকে চেনে না, যে স্কুলে আপনার ছেলেমেয়ে পড়ে তারা বলছে আধার ছাড়া সে পরীক্ষায় বসতে পারবে না। আগে যে কোনো তথ্য প্রমাণাদিতে সরকারি গেজেটেড অফিসার সই করে দিলে তা গ্রাহ্য হত। খেয়াল করে দেখেছেন কি আধারে কি কারুর সই আছে?"এই জনশুনানিতে অন্যতম বক্তা ছিলেন ড: অনুপম সরাফ, যিনি একসময়ে নিজে দু’টি পরিচয় পত্রের পরিকল্পনা করেছেন (একটি মনোহর পারিক্কর যখন প্রথম গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, আর একটি যখন তিনি পুণা শহরের সিআইও ছিলেন)। যে প্রশ্নগুলি উনি শুরুতেই তুলে ধরলেন – আধারের আগে কি এই ধরনের সমস্যা ছিল? কোনও মানুষকে চেনার এই যে নতুন সমস্যা তা কি ছিল? তিনি বলেন, “ব্যাঙ্ক, যার সঙ্গে আপনার এতো দিনের সম্পর্ক সে হঠাৎ বলছে আপনাকে চেনে না, যে স্কুলে আপনার ছেলেমেয়ে পড়ে তারা বলছে আধার ছাড়া সে পরীক্ষায় বসতে পারবে না। আগে যে কোনো তথ্য প্রমাণাদিতে সরকারি গেজেটেড অফিসার সই করে দিলে তা গ্রাহ্য হত। খেয়াল করে দেখেছেন কি আধারে কি কারুর সই আছে? যুক্তি হিসাবে অনেকে বলতে পারেন কম্পিউটার থেকে বেরোনো জিনিষে সই লাগে না।” তাঁর আলোচনায় উঠে আসে আরটিআই করে জানা গেছে এক মারাত্মক তথ্য ইউআইডিএআই যারা আধার তৈরির দায়িত্বে আছে তারা এই সই করতে পারবে না, কারণ কোনটা আসল কোনটা নকল সেটা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। যেমন তারা কাউকে চিহ্ণিতকরণ করতে পারে না, বলতে পারে না আপনার হাতের ছাপ আপনারই কি না, বলতে পারে না আপনার হাতের ছাপের সাথে আপনার ছবিই আছে কি না! যদি ইউআইডিএআই-এর কাছে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই যে কোন্ অর্থে একটি আধার কার্ড নিলে অভিনব অর্থাৎ ইউনিক? নন্দন নিলেকনি যিনি আধার প্রকল্পের সিইও ছিলেন, প্রথম আধার প্রকল্প শুরু করার সময়ে বলেছিলেন যাদের কোনো পরিচয়পত্র নেই তাদের জন্য এই আধার, অথচ এখন দেখা যাচ্ছে যারা কোনওরকম পরিচয়পত্রহীনদের তালিকায় ছিলেন তারা সেই একই জায়গায় আছেন এবং আরো বহু মানুষ সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন।
যারা আধার কার্ডের নিবন্ধীকার অর্থাৎ যারা আধার কার্ড তৈরি করিয়েছেন তার মধ্যে ২০ জন বিভিন্ন রাজ্য সরকার আর বাদ বাকি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এখানেই প্রশ্ন ওঠে এদের পক্ষে কি সম্ভব ভারতবর্ষের ৭০৭টি জেলা, ৫০০০ শহর বা ৬,০০,০০০ গ্রামে পৌঁছে গিয়ে আধার তৈরি করা?
যখন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেন যে ৪৯,০০০ আধারের এনরোলমেন্ট সেন্টার বাতিল করেছেন বেনিয়মের কারণে তখন প্রশ্ন ওঠে সেই বেনিয়মের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া ভুয়ো বা ভুল আধার কতগুলি হয়েছে? যদি ওই সেন্টারগুলি গড়ে দিনে ৫টি করে ভুল বা ভুয়ো আধার তৈরি করে তাহলে বছরে ৩০০টি কাজের দিন ধরলে গত ৪ বছরে ভুয়ো বা ভুল আধারের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৯০০০ X ৫ X ৩০০ X ৪ = ২৯, ৪০, ০০, ০০০ বা ২৯ কোটি ৪০ লক্ষ। মনে রাখতে হবে এই ভুয়ো আধার কার্ড এখনো আধারের ডেটা বেসে আছে, কেউ এর অডিট করেনি; অন্যদিকে সরকার থেকে বলা হচ্ছে প্রায় সবাই আধারে নথিভুক্ত করে ফেলেছে। এই ভুয়ো আধার নম্বর দিয়ে ব্যাঙ্ক আ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুই করা সম্ভব।
এই জনশুনানিতে একটি দাবি সনদ পেশ করা হয়, ঠিক হয় আধারে বঞ্চিত মানুষের কাছে এই দাবি সনদ নিয়ে পোঁছে যাওয়া হবে। দাবি সনদটি নিম্নরূপ:
১. আমরা, ভারতবর্ষের জনগণ, এতদ্বারা ভারত সরকার ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যে, আধার প্রকল্প (পরে ২০১৬ থেকে আধার আইন) চালু করার দরুণ জীবন ও জীবিকার যে ক্ষতি হযেছে তার জন্য নিম্নলিখিত ভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২. আধার প্রকল্পে নথিভুক্তিকরণ সম্পূর্ণ বন্ধ করে ও যেকোনো ধরণের সরকারি বা বেসরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্পে আধার সংযুক্তিকরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।
৩. উদ্দেশ্যের সীমাহীনতা ও নির্বিচার প্রয়োগের দ্বারা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার মৌলিক অধিকারকে অগ্রাহ্য করার দরুণ আধার আইন, ২০১৬-কে বাতিল করে এবং সেন্ট্রাল আইডেন্টিটিজ ডাটা ডিপোজিটরি (সিআইডিআর), স্টেট রেসিডেন্ট ডাটা হাবস (এসআরডিএইচ), ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনআইপিআর) বা অন্য যে কোনো তথ্যপঞ্জি যেখানে আধার সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে সেই সমস্ত তথ্যপঞ্জি থেকে আধার প্রকল্পের শুরু থেকে যে সমস্ত তথ্য সংগৃহীত হয়েছে তা মুছে ফেলার আইন চালু করতে হবে।
৪. আধার প্রকল্পের দরুণ কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধে বা ভর্তুকি থেকে বঞ্চিত হওযার ফলে যাদের জীবন, জীবিকা বা স্বাধীনতার যে ক্ষতি হয়েছে তাদের সবাইকে (প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়কে) সর্বোচ্চ সম্ভব আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
যেক্ষেত্রে আধার সংযুক্তি না করার দরুণ ‘সামাজিক মৃত্যু’ হয়েছে বা পরিচয়হানি ও তার থেকে মৌলিক অধিকারের হানি ঘটেছে, সেই সব ক্ষেত্রে আমরা পরিচয় ও অধিকারকে সম্পূর্ণ ফিরিয়ে দেওযার ও সে বিষয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্য মার্জনা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
যখন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেন যে ৪৯,০০০ আধারের এনরোলমেন্ট সেন্টার বাতিল করেছেন বেনিয়মের কারণে তখন প্রশ্ন ওঠে সেই বেনিয়মের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া ভুয়ো বা ভুল আধার কতগুলি হয়েছে? যদি ওই সেন্টারগুলি গড়ে দিনে ৫টি করে ভুল বা ভুয়ো আধার তৈরি করে তাহলে বছরে ৩০০টি কাজের দিন ধরলে গত ৪ বছরে ভুয়ো বা ভুল আধারের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৯০০০ X ৫ X ৩০০ X ৪ = ২৯, ৪০, ০০, ০০০ বা ২৯ কোটি ৪০ লক্ষ।জরুরি ভিত্তিতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও আমরা জানাচ্ছি:
১. শীর্ষ আদালতের ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ও ১১ আগস্ট, ২০১৫-র নির্দেশের ভিত্তিতে অতি শীঘ্র পূর্বাবস্থার প্রত্যাবর্তন ঘটানো, অর্থাৎ, “কোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে কোনো সুবিধে পাওয়ার জন্য আধার উল্লেখ করার শর্ত থাকবে না” – আধার কার্ড প্রকল্পটি একদম স্বেচ্ছানির্ভর এবং কোনো ভাবেই তাকে বাধ্যতামূলক করা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টি চূড়ান্তভাবে শীর্ষ আদালতে নির্ধারিত হচ্ছে।
২. আধারে নিবন্ধীকৃত নাগরিকদের (ক) আধার প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত ও বায়োমেট্রিক তথ্য আধার তথ্যভিত্তি থেকে মুছে দিতে হবে (খ) সত্তা প্রমাণ, জন্ম তারিখ বা বাসস্থানের প্রমাণের জন্য অন্যান্য অনুমোদিত কাগজ ব্যবহার করতে অনুমতি দিতে হবে।
৩. ভারত সরকার, ইউনিক আইডি কর্তৃপক্ষ ও আধার প্রকল্প প্রস্তুতি ও কার্যকরী করার জন্য অন্যান্য এজেন্সিগুলির দাবি, আধারের ফলে নাগরিক স্বাধীনতা খর্বিত হয়নি বা কোনও ব্যক্তি ন্যায্য সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হননি, এই বক্তব্য খতিয়ে দেখতে শীর্ষ আদালতের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত করা হোক।
৪.আধারের ব্যবহারকে কেবলমাত্র বায়োমেট্রিক প্রত্যয়নের একটি সংখ্যা অথবা চাইলে একটি পরিচিতি হিসেবে গ্রাহ্য করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য কঠিন ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।
৫. যে সমস্ত কন্ট্রাক্টরদের কাছে তথ্য দেওয়া হয়েছে তাদের সমেত আধার তথ্যভিত্তি ও তার নিরাপত্তা বন্দোবস্তের সম্পূর্ণ অডিট করাতে হবে, আধার প্রকল্পের গোড়া থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যে তদন্ত ও অডিট-এ যে সমস্ত ব্যক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে, এটা সুনিশ্চিত করতে যে আধারের জন্য সংগৃহীত তথ্য কখনই সিআইডিআর-এর এলাকার বাইরে কোনো যন্ত্রে সঞ্চিত হয়নি। আধার তথ্য বাইরে গেলে ভারতের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি রয়েছে তা বিবেচনা করে ওই ধরনের তদন্তে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও নাগরিক স্বাধীনতার প্রবক্তাদের সঙ্গে সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগের উচ্চ প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদেরও যুক্ত করতে হবে।
৬. বিভিন্ন জালিয়াতির যে অভিযোগ ও জনসাধারণের দুশ্চিন্তার সমাধানের ক্ষেত্রে ইউআইডএআই ধারাবাহিকভাবে যে অনীহা দেখাচ্ছে তা মাথায় রেখে কোনো সীমাবদ্ধতা ব্যতিরেকে, আধার প্রকল্পের দরুণ যে প্রবল সত্তার জালিয়াতির অভিযোগ উঠছে তাকে খতিয়ে দেখার জন্য ওমবাডসম্যান নিয়োগ করতে হবে।
৭. জাতীয় নিরাপত্তার এবং ভারতের অধিবাসীদের নাগরিক স্বাধীনতার পক্ষে ক্ষতিকারক আধার প্রকল্পের কোনো সংগৃহীত তথ্য যদি কেউ ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে তাদের জরিমানা ও শাস্তি ধার্য করতে হবে।
প্রথম চালু করার পর থেকে আধার প্রকল্পকে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত করার দ্বারা ভারতের নাগরিক ও অধিবাসীদের নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এক বিপদে পরিণত করা হয়েছে। আধারের বিপদকে রোখার জন্য সমস্ত প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সচেতন করার জন্যই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন উদ্যোগে এ ধরনের জনশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে।
এই জনশুনানির তরফ থেকে জনসাধারণের কাছে আবেদন করা হয়:
আধার গণতন্ত্র এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের উপর একটি চূড়ান্ত আঘাত। আপনি তা মেনে নিয়ে নিজে একটি সংখ্যায় পরিণত হয়ে যাবেন কিনা সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী ফ্যাসিস্ট কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু হয়েছে তাতে সামিল হবেন সেটাও আপনাকেই ঠিক করতে হবে।
লেখক একজন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মী।