অর্ণব গোস্বামী ও রিপাবলিক টিভিকে আইনি নোটিস: অ্যাডভোকেট সুধা ভরদ্বাজ-এর গণবিজ্ঞপ্তি


  • July 5, 2018
  • (0 Comments)
  • 2760 Views

এই মুহূর্তে কর্পোরেট চালিত ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাওয়া মানেই অ্যান্টি-ন্যাশনাল তকমা পাওয়া; কর্পোরেটের কাছে বিকিয়ে যাওয়া মিডিয়া এবং সঙ্ঘীদের মোসায়েবী সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারিত মিথ্যা তথ্য, ভুল খবরের মাধ্যমে সমাজের কাছে ‘প্রমাণ’ হয়ে যাওয়া দেশদ্রোহের ‘অপরাধ’। তেমনই ভুয়ো অপরাধে অপরাধী হয়ে চলেছেন অ্যাডভোকেট সুধা ভরদ্বাজের মতো অ্যাকটিভিস্টরা। সুধা সারা জীবন ছত্তিসগড়ের শ্রমিকশ্রেণী, আদিবাসী ও দলিতদের অধিকারের দাবিতে লড়াই করেছেন। তাঁর মতো ব্যক্তিত্বকে যে দেশে মিথ্যা অভিযোগে বন্দী করার চক্রান্ত করা যায়, সেই দেশের ষড়যন্ত্রী শাসকচক্রের বিরুদ্ধে একত্রে প্রতিবাদের ডাক দেবার সময় এসে গেছে অনেকদিন আগেই। রিপাবলিক টিভিতে সম্প্রচারিত নানান অভিযোগের জবাব দিয়েছেন সুধা। নিচে গ্রাউন্ডজিরো থেকে করা তাঁর জবাব-এর বাংলা অনুবাদ দেওয়া হল।

অ্যাডভোকেট সুধা ভরদ্বাজ

খবর পেলাম, রিপাবলিক টিভি নামে একটি চ্যানেল ৪ঠা জুলাই ২০১৮-য় “সুপার এক্সক্লুসিভ ব্রেকিং নিউজ” নামে অর্ণব গোস্বামীর উপস্থাপনায় একটি অনুষ্ঠান দেখায়। অনুষ্ঠানটিতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের এক লম্বা ফিরিস্তি বারবার দেখানো হয়েছে – যে অভিযোগগুলি আগাগোড়া হাস্যকর, অবমাননাসূচক, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। গোস্বামী দাবি করেছেন যে আমি ‘কমরেড প্রকাশ’ নামে এক মাওবাদীকে একটি চিঠি লিখেছি (নিজেকে “কমরেড অ্যাডভোকেট সুধা ভরদ্বাজ” বলে পরিচয় দিয়ে) যে “কাশ্মীরের মত একটা পরিস্থিতি” তৈরি করতে হবে। আমার বিরুদ্ধে মাওবাদীদের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে। আমি নাকি এমনও প্রতিপন্ন করেছি যে বিভিন্ন উকিল, যাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে আমি অত্যন্ত দক্ষ মানবাধিকার উকিল বলে চিনি এবং কয়েকজনকে আমি চিনিই না, তাঁদের সবার মাওবাদী যোগাযোগ আছে।

আমি দৃঢ়তার সাথে ও নির্দিষ্টভাবে বলতে চাই যে অর্ণব গোস্বামীর উল্লিখিত ওই চিঠি – যদি আদৌ ওরকম কোনও চিঠির অস্তিত্ব থেকে থাকে – কোনভাবেই আমার লেখা নয়। আমি দৃঢ়ভাবে রিপাবলিক টিভির সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করছি। রিপাবলিক টিভির এই অপবাদ আমার কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনে অপপ্রভাব তৈরি করেছে। রিপাবলিক টিভি তাদের অনুষ্ঠানে ঐ চিঠি কোথা থেকে পাওয়া গেল তার কোন উল্লেখ করেনি। বাস্তবিক, আমার বেশ অদ্ভুতই লাগছে যে এত গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের প্রমাণ যে চিঠি, সেটি প্রথম উদয় হল অর্ণব গোস্বামীর স্টুডিয়োতে।

মূল ইংরাজি লেখাটি পড়তে হলে এখানে ক্লিক করুন
গত ৩০ বছর ধরে আমি নিষ্ঠার সাথে ট্রেড ইউনিয়নের কাজ করেছি, প্রবাদপ্রতিম শঙ্কর গুহনিয়োগীর সংগঠন ছত্তিসগড় মুক্তি মোর্চাতে, দাল্লি-রাজহারা ও ভিলাইয়ের শ্রমিকবস্তিতে যার সাক্ষী শয়ে শয়ে শ্রমিক। ট্রেড ইউনিয়নের কর্মী হিসেবেই আমি ২০০০ সালে ওকালতি শুরু করি, এবং তার পর থেকে শ্রমিক, কৃষক, আদিবাসী ও গরিব মানুষদের জন্য অসংখ্য কেস লড়েছি শ্রম, জমি অধিগ্রহণ, জঙ্গল ও পরিবেশ রক্ষা আইন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ২০০৭ সাল থেকে আমি বিলাসপুরে ছত্তিসগড় হাই কোর্টে প্র্যাকটিস করছি এবং হাই কোর্ট আমায় ছত্তিসগড় স্টেট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির একজন সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। গত বছর আমি ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি দিল্লিতে অস্থায়ী অধ্যাপক ছিলাম, যেখানে আমি আদিবাসীদের অধিকার ও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে একটি সেমিনার কোর্স এবং আইন ও দারিদ্র্য নিয়ে নিয়মিত কোর্সের একটি অংশ করাই। তার সাথে, দিল্লি জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির একটি অনুষ্ঠানে আমি শ্রীলঙ্কার শ্রম আদালতের প্রিসাইডিং অফিসারদের সামনে বক্তব্য রাখি।

জনস্বার্থের পক্ষে আমার অবস্থান ও মানবাধিকার উকিল হিসেবে আমার কাজ প্রকাশ্যভাবে নথিভুক্ত। আমি ভালই জানি যে আমার কাজ ও অবস্থান প্রায়শই রিপাবলিক টিভির আর অর্ণব গোস্বামীর চিৎকারের মাধ্যমে জারী করা মতামতের বিরুদ্ধে যায়। আমার মতে, আমার ওপর এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা আক্রমণের কারণ হচ্ছে সুরেন্দ্র গাডলিং-এর গ্রেফতারের নিন্দা করে দিল্লির একটি সাংবাদিক সম্মেলনে রাখা আমার একটি বক্তব্য। উকিলদের সংগঠন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ পিপলস লইয়ারস (আই এ পি এল)-ও ভীম আর্মির সাথে যুক্ত অ্যাডভোকেট চন্দ্রশেখর বা স্টারলাইট আন্দোলনে গুলি চলার পর গ্রেফতার হওয়া অ্যাডভোকেট বাচিনাথন প্রমুখ উকিলদের বিষয়গুলি নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে। পরিষ্কারভাবেই, সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষের মানুষদের চুপ করানোর উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্র এই উকিলদের আক্রমণের লক্ষ্য করেছে। এসবের পেছনে রাষ্ট্রের লক্ষ্য ভীতিপ্রদর্শন ও আইনের অধিকারের সাম্য থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা। আই এ পি এল খুব সম্প্রতি কাশ্মীরের উকিলদের কি ধরণের অসুবিধের মুখে পড়তে হয় তা নিয়ে একটা তথ্যানুসন্ধান করেছে। মানবাধিকার উকিল হিসেবে আমি ছত্তিসগড় হাই কোর্টে আদিবাসীদের হয়ে হেবিয়াস করপাস ও মিথ্যা এনকাউন্টারের কেস লড়েছি ও তার সাথে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে মানবাধিকারের পক্ষের বহু মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছি। সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কোন্ডাসাওয়ালি গ্রামে (সুকমা, ছত্তিসগড়) একটি কেসের তদন্তের ব্যাপারে আমার সহায়তা চেয়েছে। এই প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি যে পেশাগত সততা ও সাহস একজন মানবাধিকারের উকিলের থেকে কাম্য, সেই পেশাগত সততা ও সাহস নিয়ে কাজ করেছি। আর সেটাই মনে হচ্ছে আমার ‘অপরাধ’ যার জন্য অর্ণব গোস্বামী তাঁর বিশেষ মনোযোগ আমার দিকে নিবদ্ধ করেছেন। আমি আমার উকিলকে বলেছি অর্ণব গোস্বামী ও রিপাবলিক টিভিকে তাদের বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যা অপবাদের জন্য আইনি নোটিস পাঠাতে।

নিউ দিল্লি, ৪ঠা জুলাই

অ্যাডভোকেট সুধা ভরদ্বাজ ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি দিল্লি-র অস্থায়ী অধ্যাপক, পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিস-এর জাতীয় সম্পাদক, ও আই এ পি এল-এর সহ-সভাপতি

বিজ্ঞপ্তিটি ইংরাজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সুতনয়া। সুতনয়া একজন রাজনৈতিক কর্মী।

Share this
Leave a Comment