কলিম খান – বাংলার অচিন পথের পথিক


  • June 14, 2018
  • (4 Comments)
  • 7850 Views

কলিম খান
জন্ম ০১.০১.১৯৫০ মামুদাবাদ(মেদিনীপুর)
মৃত্যু ১১.০৬.২০১৮ কলকাতা
বাংলার ব্যতিক্রমী ভাষাবিদ কলিম খানের প্রয়াণে একটি শ্রদ্ধার্ঘ।

শমীক সাহা

‘আম’ বলতেই যে রসালো সুস্বাদু ফলের ছবি আমাদের মনে ভেসে ওঠে সেই ছবিটা আমের অনুষঙ্গে জড়িয়ে গেল কী করে? অর্থাৎ আম শব্দটার ভিতরে আম সম্পর্কিত তথ্যগুলো ঢুকলো কী করে? যত প্রাচীন হোক সেই পদ্ধতি, শব্দগুলো তৈরি হওয়ার সময়ে কোন এক পদ্ধতিতে শব্দের ভিতরে এই অর্থ ঢোকানো হয়েছিল এবং একই সাথে শব্দের ভিতর থেকে সেই অর্থ নিষ্কাশনের একটা উপায়ও রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ অক্ষরগুলো খামের মত, একটা বার্তা সম্পন্ন চিঠিকে পেটের ভিতরে নিয়ে একজন মানুষের কাছ থেকে অপর মানুষের কাছে পৌঁছ যায়, আর প্রাপক সেই খামের ভিতর থেকে সেই চিঠির বার্তাকে বার করে বুঝে নেয়। অক্ষরময় শব্দের ভিতরে এই বার্তা ঢোকানো এবং বার করার পদ্ধতিটা কী সেটাই খোঁজার চেষ্টা করছিলেন কলিম খান। বেশির ভাগ আম আদমির মত আম খেয়েই তার সন্তুষ্টি হচ্ছিল না, তিনি মেতে উঠলেন শব্দ অক্ষর ভাষার খোসা ছাড়িয়ে ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখার অভিযানে। পেলেন – ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি, পরে আরও পরিবর্ধিত করে নির্মাণ করলেন – ক্রিয়াভিত্তিক ও বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধি, একাজে তার অগ্রজ সহপথিকের ভূমিকা নিলেন রবি চক্রবর্তী।

কলিম খান ও রবি চক্রবর্তী আবিষ্কৃত ক্রিয়াভিত্তিক ও বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধি কী?

ক্রিয়াভিত্তিক ও বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধি অনুসারে – বাংলা ভাষার বিশেষ্যগুলি তৈরি হয়েছে ক্রিয়া থেকে। কোন বস্তু প্রাণী বা প্রাকৃতিক সত্ত্বা কী কাজ করে, প্রকৃতিতে কোন ভূমিকায় সে ক্রিয়াশীল সেটা বোঝানোর জন্যই – নামকরণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ বস্তু প্রাণী বা সত্ত্বার নাম করণের মধ্যেই তার ক্রিয়ার বিবরণ ধরে রাখা হয়েছে। আমাদের ৫০টা বর্ণ আদিতে মূল ৫০টা ক্রিয়াকেই বোঝাত। আর এই বর্ণগুলিকে পাশাপাশি সাজানো হয়েছে তাদের ক্রিয়ার পরম্পরার সাথে সাযুজ্য রেখেই। তাই শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার জন্য অন্য শব্দের সাহায্য নেবার দরকার নেই, শব্দের ভিতরে উঁকি দিতে পারলে, অর্থাৎ শব্দে ব্যবহৃত বর্ণগুলি কোন ক্রিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করছে সেটা বুঝতে পারলেই গোটা শব্দটার মানে বোঝা যাবে। তার সাথে বোঝা যাবে সেই শব্দটির বিবর্তনের রূপরেখা; অর্থ পরিবর্তনের ধাপগুলি, চেনা যাবে সেই সামাজিক অর্থনৈতিক অভিঘাতগুলিকে, যাদের অভিঘাতে শব্দটা তার অর্থকে সংকুচিত বা প্রসারিত করছে। অর্থাৎ একটা শব্দকে ছেনে পাওয়া যাবে, তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা আদি ক্রিয়ার বিবরণ, সমাজ ইতিহাসের কোন পথ বেয়ে সে আজকের চেহারায় আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, সেই গোটা বিবরণটাও। বলা যায় এক একটা শব্দের ভিতরে উঁকি দিয়েই আমরা কথা বলতে পারবো আমাদের পূর্বজদের সাথে, তাদের জীবনযাত্রাকে দেখতে পাবো চোখের সামনে।

এ এক রত্নময় দুনিয়া, যে দুনিয়ার হারিয়ে যাওয়া প্রবেশপথ খুঁজে বার করে খুলে দিয়ে ছিলেন কলিম খান, রবি চক্রবর্তীকে সাথে নিয়ে এঁকেছেন সেই দুনিয়ার মানচিত্র। কয়েকটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা কিছুটা বোঝা যাবে, কী ভাবে শব্দের ভিতরে উঁকি দেওয়া যায় –

কাপুরুষ –
কাপুরুষ শব্দের ক্রিয়াভিত্তিক ও বর্ণভিত্তিক অর্থ – শুধুমাত্র কায়া যার পুরুষের মত। এখানে পুরুষ বলতে শুধু MALE বোঝানো হচ্ছে না, আরও বড় বিষয়কে বোঝান হচ্ছে। প মানে যে পালন করে, যেমন – গোপ, মানে গো পালন করে যে। পু মানে প্রাপণকারী নবরূপে উত্তীর্ণ হয়েছে। পুর মানে পু রয় যাহাতে। অর্থাৎ যার পালন করার ক্ষমতা আছে সে কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে উত্তীর্ণ হয়ে স্থিত হয়েছে যেখানে। এই জন্যই সমৃদ্ধ জনস্থানের নামে পুর শব্দ যোগ হয়, খাবারের সব থেকে সুস্বাদু অংশটার নাম পুর, মানে তার ভিতরে অনেক উপাদান পালিত হচ্ছে, যা উত্তীর্ণ হবার ক্ষমতা রাখে। এবার এই পুর কে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উষ্কে দেবার বা ছড়িয়ে দেবার ক্ষমতা যে রাখে সে পুরুষ। ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার ক্ষমতা সম্পন্ন শুক্রাণু নামক পুর কে যে ছড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে সেও পুরুষ। কিন্তু শুধু শুক্রাণু দিতে পারলেই সে পুরুষ নয়, অর্থাৎ সমাজ সংসারকে পালক হিসেবে নবরূপে উত্তীর্ণ করার ক্ষমতা সব পুরুষের থাকে না, যে পারে সেই পুরুষ। আর এই সমাজকে বিশেষ দিকে উষ্কে দেবার ক্ষমতা যার নেই অথচ কায়াটা পুরুষের তারা সবাই কাপুরুষ। সমাজকে বিশেষ দিকে উষ্কে দেবার ক্ষমতা যদি কোন মহিলার থাকে তাহলে তিনিও পুরুষ।

অশ্ব –
‘অশ’ বহন করে যে সেই ‘অশ্ব’। অশ শব্দটা তো অচেনা, প্রচলিত অভিধানেও নেই। ‘অশ’ শব্দের ক্রিয়াভিত্তিক অর্থ হল – অস্তিত্বের শক্তি যার থাকে সে অশ। বাহিরের শক্তিই যার শক্তি সে – বশ, অর্থাৎ তার নিজের নিজেকে পরিচালনা করার শক্তি নেই, অন্য কেউ তাকে চালনা করছে। ঠিক বিপরীত ভাবে – ‘অশ’ চালিত হয় নিজ শক্তিতে। এই নিজ শক্তিতে চালিত হওয়া, ক্রিয়াশীল হওয়া খুব সহজ কাজ নয়। এই স্বাধীন স্বতন্ত্র চলাই অস্তিত্ব রক্ষা। বলা যায়, তার অস্তি আছে। এই ‘অশ’কে যে বা যারা বহন করে তারাই অশ্ব। ‘অশ’ এর শেষে জুড়ে গেছে বহনের – ‘ব’। অশ্ব যে সমাজে স্থিত হয় তাই অশ্বত্থ। সমাজের আহরিত সম্মিলিত জ্ঞানের বাহকরা তাদের মেধা কোথায় বিনিয়োগ করবে তারই মীমাংসা – অশ্বমেধ যজ্ঞ (অশ্ব-টা প্রতীকী, সাদৃশ্য অর্থ আর অন্তর্নিহিত অর্থের এই খেলা আমাদের ঐতিহ্য)। আর “অশ্ব” দের তো ডিম পাড়ার মত বাজে কাজে থাকার কথা নয় তাও যখন তারা বাজে কাজে ব্যস্ত হয় তখন যা তৈরি হয় তা – অশ্ব ডিম্ব। আর চারপেয়ে ঘোড়া কিন্তু কখনই সাধারণ মানুষের নাগালের বস্তু নয়, সব থেকে গুরুত্ব পূর্ণ ব্যক্তি বা বস্তুকে বহন করার জন্যই তার ব্যবহার, এবং আমরা যে সময়ের কথা বলছি তখন এই সম্মিলিত জ্ঞানের বাহকরাই সমাজের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, তাই চারপেয়ে জন্তুটা শুধু মানুষটিকে বহন করছে না, জ্ঞানকেও বহন করছে তাই তার নামও – অশ্ব। ইংরাজিতে একটা কথা আছে – Horse is a noble animal. জন্তুর সম্বন্ধে নোবেল-এর মত বিশেষণ বসানোটা একটু আজব লাগে, কিন্তু অশ্ব মানে বোঝার পর আর লাগে না।

গাধা –
‘অগাধ’ শব্দটা খুবই পরিচিত। জ্ঞানের গভীরতা বোঝাতেও ব্যবহার করি জলের গভীরতা বোঝাতেও। আচ্ছা অগাধ মানে যদি এতটাই গভীর বোঝানো হয়, যার তল পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে ‘গাধ’ বলতে কি বোঝাবে? ‘গাধ’ শব্দটা তো ব্যবহার হয় না। কিন্তু এই শব্দটার মানে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বঙ্গীয় শব্দকোষেই দিয়েছেন। গাধ > অবস্থানযোগ্য স্থান, যেখানে প্রতিষ্ঠা বা স্থিতি আছে; অগভীর, সুপ্রতর, সুখোত্তরণীয়। আর খান-চক্রবর্তী লিখছেন – গাধের আধারই গাধা। অর্থাৎ অগভীর পাত্র বা ধারক। এরা কোন কিছুরই গভীরতায় যেতে চায় না, কিন্তু একই কাজের পুনরাবৃত্তিতে পটু। যারা চারপেয়ে জন্তু ‘গাধা’ নিয়ে কাজ করেছেন, তারা জানবেন এই জন্তুটাও কিন্তু অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং প্রশিক্ষিত হলে একই কাজ বারংবার অক্লান্ত করে যেতে পারে। তাই জন্তুর নাম ‘গাধা’ হয় সাদৃশ্য অর্থে। আর গভীরতার ঝুঁকি না নিয়ে, বেশ ‘সুখোত্তরণীয়’ জীবনেই স্থিত হতে চায় এমন মানুষই যে আমাদের চারপাশে বেশি – তাই গাধ-এর আধার হিসেবেই তারা জীবন কাটান।

এই শব্দার্থবিধি নিয়ে পুরাণ ও মহাকাব্যগুলি পাঠ করে কলিম খান বললেন –

আমাদের পুরাণ ও মহাকাব্যগুলিকে যে ‘ছান্দস’ বলা হয়, তা সঠিক, এগুলো বাস্তবতই ‘আচ্ছাদিত’ এই কাহিনী বা চরিত্র সবই সাংকেতিক(রূপক নয়)। কোন অলৌকিক কল্পিত কাহিনী আমাদের পুরাণ ও মহাকাব্যে নেই। পুরাণ ও মহাকাব্যের চরিত্রগুলি মানুষ বা রাক্ষস বা দৈত্য নয়। প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে প্রতিকায়িত করে এই চরিত্রগুলি নির্মিত, অর্থাৎ এগুলি মানুষ নয় সত্ত্বা। কাহিনীগুলি এই বিভিন্ন সত্ত্বার কার্যকলাপ, সংঘাত ও সংশ্লেষ। যেমন – দক্ষযজ্ঞ এক সামাজিক সংঘাতের ইতিহাস। ‘শিব’ মানে হল জ্ঞানের ‘শি’খা ‘ব’হণকারী নিত্ত নতুন জ্ঞান অন্বেষক। ‘দক্ষ’ মানে হল ইতোমধ্যে আহরিত জ্ঞানের বারংবার প্রয়োগ করে যারা দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছেন। তাহলে দক্ষযজ্ঞ হল ‘শিব(উদ্ভাবক) বনাম ‘দক্ষ’দের(একাডেমিশিয়ান) সামাজিক প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার লড়াই। রবীন্দ্রনাথ যা অনুমান করেছিলেন তাই ঠিক, পুরাণ ও মহাকাব্য ইতিহাস রচনার ভারতীয় প্রকরণ(ভারতবর্ষের ইতিহাস – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। ইউরোপ যে ভাবে কালানুক্রমিক ইতিহাস পড়ার পদ্ধতি আমাদের শিখিয়েছে, তার থেকে এই ভারতীয় পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা। ভারতের স্বরূপকে বুঝতে হলে ইউরোপীয় পদ্ধতির ইতিহাস পাঠ যথেষ্ট নয়, পুরাণ ও মহাকাব্যকে ক্রিয়াভিত্তিক ও বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধি দিয়ে পড়তে হবে। সাথে বলা দরকার এই পদ্ধতিতে পুরাণ ও মহাকাব্যের যে ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে হিন্দুত্ববাদীদের গোঁড়ামি ও মৌলবাদকে বেআবরু করার যথেষ্ট উপাদান আছে।

কলিম খান

খান-চক্রবর্তীর এই শব্দার্থবিধি ও তা দিয়ে উন্মোচিত পুরাণ ও মহাকাব্যের ব্যাখ্যা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। বিতর্কে কোন সমস্যা নেই, হাজার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই তো এই দুই ঋষি প্রতিম গবেষক এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, তাঁরা কোথাও কোন দিন বলেননি তারা পরম সত্যের সন্ধান পেয়েছেন, বরং তাঁরা আরও বেশি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে ঋদ্ধ হতে চেয়েছেন চিরকাল, কিন্তু এই দুই গবেষক যে প্রশ্নগুলি তুলেছেন তার জবাব তো আর কোন পণ্ডিত দিতে এগিয়ে এলেন না। কলিম খানের প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে – মৌলবিবাদ থেকে নিখিলের দর্শনে। তারও অন্তত ৫-৭ বছর আগে থেকে বহু ছোট পত্রিকায় তিনি লিখছেন। অর্থাৎ প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি তাঁর ব্যতিক্রমী বক্তব্য ক্রমাগত বলে চলেছেন। বিশাল বপু শব্দকোষ রচনা করেছেন। বারংবার বলেছেন – তাঁর শব্দার্থবিক্ষা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রদর্শিত পথে, তাঁর ইতিহাসবিক্ষা রবীন্দ্রনাথ নির্দেশিত পথে। কলকাতা তথা বাংলার বুধজনেদের বিস্ময়কর নীরবতা এই যে, তারা যদি কলিম খান কে অপদার্থ বলে মনেও করেন, কিন্তু তিনি এই দুই মহান ব্যক্তির যে দিকগুলোকে নির্দেশিত করছেন, সে গুলোকেও কেউ নিজের মত করে নেড়ে ঘেঁটে দেখল না।

কেউ বলল না – রবীন্দ্রনাথ পুরাণকে ভারতীয় ইতিহাস চর্চার প্রকার বলেছেন এটা রবীন্দ্রনাথের ভুল। হরিচরণ লিঙ্গ শব্দের প্রথম অর্থ দিচ্ছেন জ্ঞানসাধন কারণ হরিচরণ পাগল ছিলেন। বাংলার বুধজনেরা কলিম খান কে উপহার দিলেন উপেক্ষা। কারণ তিনি রবীন্দ্রনাথের দেখান রাঙামাটির পথে হেঁটে চুলার দিকে রওনা দিয়েছিলেন, তিনি হরিচরণের শব্দার্থ অনুসন্ধানের রূপরেখা নিজের মত করে ব্যাখ্যা দিয়ে ছিলেন, যা অন্য কারো এলেমে কুলোয়নি।

বাংলার অসংখ্য জোড়া শব্দের অর্ধেক মানে আমরা জানি বাকিটুকুর মানে জানি না, সেগুলোর সম্পূর্ণ অর্থ কী? কলিম খান ছাড়া কেউ এই চ্যালেঞ্জ নিতে সাহস পায়নি, কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক –

কার্য কলাপ, কলাপ মানে কী? কেন পাশে বসছে?
সাদা মাঠা, মাঠা মানে কী? কেন পাশে বসছে?
আশে পাশে, আশে মানে কী? কেন পাশে বসছে?
যোগাড় যন্ত্র, যন্ত্র মানে এখানে কী? কেন পাশে বসছে?
চেষ্টা চরিত্র, চরিত্র মানে এখানে কী? কেন পাশে বসছে?

কলিম খান – রবি চক্রবর্তী তাদের শব্দার্থবিধি দিয়ে এই জগতের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের নানা ছবি দেখতে পেয়েছিলেন, কী দেখেছেন তা তাঁদের বইগুলিতে লিখেছেন। কিন্তু তাঁরা যেমন ভাবে দেখতে পেয়েছেন, আমরা তো অত নিপুণতায় শব্দের ভিতরের ক্রিয়াশীল সত্ত্বাগুলিকে এখনো চিনতে শিখিনি, তাই তাঁদের লেখাগুলো আমাদের কাছে অনেক সময়েই অদ্ভুত মনে হয়। আমাদের দেখার সুবিধার জন্য তাঁরা রচনা করেছেন – বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ (দুই খণ্ড) ও সরল শব্দার্থকোষ। কিন্তু এই শব্দার্থবিধি থেকে আমাদের ‘আধুনিক’ জীবনযাত্রা এতটাই পৃথক, যে এই শব্দার্থবিধিকে রপ্ত করা যথেষ্ট দুরূহ। তবুও আমরা অনেকেই চেষ্টা করছি শিখে নিতে। যারা এই দুনিয়ায় প্রবেশ করতে চান তাঁদের যত্ন নিয়ে নিষ্ঠা নিয়ে ক্রিয়াভিত্তিক ও বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধি রপ্ত করতে হবে, তবেই পাওয়া যাবে আসল রসের স্বাদ। যদিও জানি রেডিমেডে অভ্যস্ত দুনিয়ায় যত্ন নিষ্ঠা পরিশ্রম শব্দগুলি ক্রম বিরলতর। আজ কলিম খান নেই, রবি চক্রবর্তী বয়সের ভারে অশক্ত, কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠী – ‘বঙ্গযান’ সক্রিয়। আমরা কয়েক জন দায়িত্ব নিয়ে ধরে রাখার চেষ্টা করছি এই উত্তরাধিকার, যারা আগ্রহী যোগাযোগ করবেন। প্রশ্ন উঠুক বিতর্ক হোক, আগামীর সন্ধানে পথ চলার এ এক অনিবার্য পদক্ষেপ।

শমীক সাহা একজন সামাজিক কর্মী
Share this
Recent Comments
4
  • comments
    By: Dilip Das on June 15, 2018

    বঙ্গদেশ ও তার প্রাণপ্রিয় বাংলাভাষার প্রতি এ এক অসামান্য
    উপহার! আবিষ্কারও বটে! বিষয়টি,আজ না হোক কাল,আমার বিশ্বাস,পাদপ্রদীপের আলোয় একদিন অবশ্যই আসবে।
    কলিম খান এবং রবি চক্রবর্তী-র এই ঐতিহাসিক উদ্যোগও একদিন সমাদৃত হবে। এই মহতী উদ্যোগকে ধ’রে রাখা ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য “বঙ্গযান” -র প্রতি অনি:শেষ শুভেচ্ছা রইল।

  • comments
    By: S das on March 31, 2019

    Please send me the price of bangiya sabdarthakosh by Rabi chakravorty and Kalim khan
    Where it is available
    I want to purchase for our library

  • comments
    By: অনু on June 26, 2020

    অনেক দিন ধরেই ক্রিয়া ভিত্তিক বাংলা শব্দার্থ ও কলিম খানের কথা শুনে আসছি কিন্তু দেখা হয়ে উঠেন, তবে কয়েকদিন আগে লিটল ম্যাগাজিনেে ‘মৌলবিবাদ থেকে নিখিলের দর্শন’ বইটার প্রথম অংশ পরে আমি অভিভূত, বাকিটা সেখানে নাই, ঢাকার বইয়ের দোকান গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানলাম আউট অফ প্রিন্ট, কলিম ও রবি দ্বয়ের অভিধানও তাই, এখোন কোথায় পাই?

  • comments
    By: কাজী রোমেনা on August 12, 2020

    একটা চিন্তা ও তার উদ্যগ অবশ্যই প্রশংসার কিন্তু বাঙলা ভাষার উৎপত্তিতে সংস্কৃত দ্বারস্হ কতটা যুক্তিযুক্ত ? রামায়ন মহাভারত কি বাঙলায় লিখিত ?

Leave a Comment