প্রেস বিজ্ঞপ্তি ৭ মে, ২০১৮: মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলি জেলায় সংঘটিত সাম্প্রতিক ‘এনকাউন্টার’ কাণ্ডে (Co-ordination of Democratic Rights Organisations (CDRO) , Indian Association People’s Lawyers (IAPL) and Women against State Repression and Sexual Violence (WSS)) সি.ডি.আর.ও , আই.এ.পি.এল. এবং ডব্লিউ.এস.এস এর তথ্যানুসন্ধানকারী দলের রিপোর্ট। মূল ইংরেজি রিপোর্টটি এখানে পাওয়া যাবে।
সংঘর্ষের আড়ালে সুপরিকল্পিত হত্যালীলা: গড়চিরোলিতে উন্নয়নের নয়া রাষ্ট্রনীতি
২২ এপ্রিল, ২০১৮ সকালে মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলি জেলার ভামরাগড় তহশিলের অন্তর্ভুক্ত বোরিয়া–কাসানসুর অঞ্চলে একটি আপাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পরেরদিন সকালে মহারাষ্ট্র পুলিশ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ১৬ জন নিহত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করে দাবি করা হয় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এরা মারা গিয়েছে। মাওবাদী সন্দেহেই এদের হত্যা করা হয়েছে। চব্বিশে এপ্রিল পুলিশসূত্রে জানা যায় যে আরও ১৫টি মৃতদেহ ইন্দ্রাবতী নদীতে পাওয়া গেছে। এই ঘটনার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে ৪০ হয়েছে। এর পরবর্তীতে, তিনটি প্রধান মানবিক অধিকার রক্ষা সংগঠনের পক্ষ থেকে (Co-ordination of Democratic Rights Organisations (CDRO) , Indian Association People’s Lawyers (IAPL) and Women against State Repression and Sexual Violence (WSS) বারোটি রাজ্যের ৪৪ জন প্রতিনিধির একটি তথ্যানুসন্ধানকারী দল গড়চিরোলি জেলার ঘটনাস্থল সহ ওই অঞ্চলের সাম্প্রতিক অতীতে ঘটা পুলিশি হিংসা এবং এ জাতীয় সংঘর্ষের অন্যান্য সমস্ত ঘটনাস্থলগুলি পরিদর্শন করে। ৫ থেকে ৭ মে ২০১৮, এই তিনদিন ধরে অনুসন্ধান চলে ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সি পি আই ) স্থানীয় সদস্যরা এবং স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি, গ্রামসভার সদস্য, আইনজীবী এবং সাংবাদিকরা এই কাজে সাহায্য করে। আমাদের অনুসন্ধানে এই তথ্যই প্রকাশিত হয় যে, এই উপরোক্ত সমস্ত ঘটনাগুলিকে প্রশাসনিক ভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ আখ্যা দিলেও এগুলি আসলে সাজানো ঘটনা।
সম্পূর্ণ তথ্যানুসন্ধানের পর আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাই যে সি–৬০ পুলিশ এবং সি আর পি এফের একটি দল মাওবাদীদের চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে এবং নির্বিচারে গুলি চালায়। এই ঘটনায় তারা প্রতিপক্ষকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়েই আন্ডার ব্যারেল গ্রেনেড লঞ্চার্সের মতো উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগ করে. এটি একপ্রকার ঠান্ডা মাথায় সংঘটিত গণহত্যা।
তথ্যানুসন্ধানকারী দল পুলিশি বিবৃতির মধ্যে প্রচুর অসংগতি ও ঘটনা–বিকৃতির নিদর্শন পেয়েছে। উচ্চসংখ্যায় নিহতের কথা মাথায় রেখেই সি–৬০ ফোর্স সমস্ত মৃতদেহ একবারে উদ্ধার করেনি। ঘটনার জরুরি সাক্ষ্যপ্রমাণ যেমন চিঠি, ফটোগ্রাফ এবং পরিচয়পত্র সংঘর্ষের পরেও বহুদিন ঘটনাস্থলে অসুরক্ষিত ভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। বাইশে এপ্রিল সাংবাদিক বিজ্ঞতিতেও মূল ঘটনাস্থলের বা মৃতদেহের কোনো ছবি প্রকাশ করা হয়নি। শুধুমাত্র কিছু নির্বাচিত সাংবাদিকদেরই প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় এবং তাদের রিপোর্ট সম্পূর্ণতই পুলিশের বিবৃতির উপর নির্ভরশীল। মূল সংঘর্ষের দুদিন পরে ওই একই ঘটনাস্থলে আরো ১৫টি মৃতদেহ পাওয়ার ঘটনা যথেষ্ট সন্দেহজনক, কারণ এই মৃতদেহ যদি ২২ তারিখের ঘটনার আহত ব্যক্তিদেরই হয়, তবে তাদের পক্ষে আরো বড় জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়াই স্বাভাবিক ছিল। এই গোটা ঘটনায় আশ্চর্যজনক ভাবে সি–৬০ পুলিশদলের কোনো বড় আঘাত লাগেনি, প্রাণহানি তো দূরস্থান। আরো জানা গেছে যে এই পুলিশ দলটি বর্তমানে বিদেশে ভ্রমণরত এবং সমস্ত যোগাযোগের বাইরে। যখন আমরা বোরিয়া গ্রামে পৌঁছাই, সেখানে আগে থেকেই নিরাপত্তাবাহিনীর একটি বিশাল দল উপস্থিত ছিল। সম্ভবত গ্রামবাসীদের ভয় দেখিয়ে তথ্যানুসন্ধানকারী দলের সঙ্গে কথা বলা থেকে বিরত রাখতেই তাদের এই উপস্থিতি। তথ্যানুসন্ধানকারী দলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য পুলিশ কাসানসুরে আহেরি থেকে লোক নিয়ে আসে।
আমাদের দলটি রাত্রিবেলা গত্তেপাল্লি পরিদর্শন করে এবং সেখানে নিরাপত্তাবাহিনীর অস্বাভাবিক মাত্রায় উপস্থিতি লক্ষ্য করে। গ্রামটিতে শেষ তিনদিন ধরে বিদ্যুৎসংযোগ না থাকায় গভীর অন্ধকার ছিল। গ্রামবাসীরা জানায় নিরাপত্তাবাহিনীকে সেইদিনই মোতায়েন করা হয়েছে এবং তাদের সামনে লোকেরা আমাদের সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিল। রাষ্ট্রীয়বাহিনী পরিদর্শনকারী দলটিরও ক্রমাগত পিছু নেওয়ার ফলে কোনোরকম কথোপকথনই ভীষণ কঠিন ছিল। ঘটনাক্রমে, বাইশে এপ্রিল থেকে এই গত্তেপাল্লিরই ৮ জন যুবক–যুবতীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা একটি বিবাহোপলক্ষে গ্রামের বাইরে গেছিল। জনৈক রাসু চাকো মাডাভি ছাড়া আর কোনো নিখোঁজ নাবালিকাকে শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ যে সমস্ত মৃতদেহকে বোরিয়া–কাসানসুর সংঘর্ষের ফল হিসাবে দাবি করেছে, তার মধ্যেই মাডাভির দেহকে গ্রামবাসীরা শনাক্ত করে। ঘটনা পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক বিবৃতি ক্রমাগতই পরিবর্তিত হতে থেকেছে। যখন নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার পুলিশের সাহায্য প্রার্থনা করে, পুলিশের তরফে তাদের বলা হয়, তারা মাওবাদীদের দলে যোগ দিয়েছে। যখন প্রশ্ন করা হয়েছে এতো সম্প্রতি মাওবাদী হওয়া সত্ত্বেও মৃতদেহগুলি কীভাবে উর্দি পেয়ে সেগুলি পরে ফেলল? তার উত্তরে পুলিশি তরফে বক্তব্য বদলে জানানো হয়, তারা নাকি একমাস আগের থেকেই মাওবাদী সংগঠনে যোগ দিয়েছে। অত্যন্ত অন্যায্য ভাবে নিখোঁজ ব্যক্তিদের আধার কার্ড রদ করা হয়েছে ও তা আজ অবধি ফেরত পাওয়া যায়নি ।
রাজারাম খাণ্ডালায় ২৩ এপ্রিল রাতে ঠিক কি হয়েছিল সে বিষয়ে পুলিশের তরফে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করা হয়েছে। ২৪ এপ্রিল দেওয়া জিমলগত্তা পুলিশ স্টেশনের বিবৃতি অনুযায়ী ঘটনাটি ঘটেছিলো রাজারাম খান্ডালায়। আবার ২৫ তারিখ নন্দুর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার সময় এসপি একটি চিঠিতে বলেন যে তারা কোপেভ্যাঞ্চা–কৌটারাম জঙ্গলে নিহত হয়েছিল। মৃতের মধ্যে চার জন মহিলাও আছেন। তথ্যানুসন্ধানকারী দল রাজারাম–খাণ্ডালার সংঘর্ষ স্থলটি পরিদর্শন করে ও নন্দুর পরিবারের সাথেও কথা বলে। তেইশ তারিখ সকালে নন্দুর বাড়ির লোক স্থানীয় পুলিশ মারফত খবর পায় যে নন্দু এবং অন্যদের তার আগের রাতে বোরিয়া–কাসানসুর থেকে ওঠানো হয়েছে। তারা নন্দুদের খুঁজতে পুলিশ ক্যাম্প ও স্টেশনে গেলেও তাদের কোনো খবর পায় না। তার পরের দিন তাদের জানানো হয় যে নন্দু এবং বাকিরা ২৩ তারিখ সন্ধ্যাবেলা নাইনার জঙ্গলে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে। তথ্যানুসন্ধানকারী দল নাইনার জঙ্গলে এই তথাকথিত সংঘর্ষস্থলটিকে খুঁজে বার করে। সেখানে জমিতে রক্তের দাগ, রাবার গ্লাভসের একটি খোলা প্যাকেট, গাছের গুঁড়িতে বুলেটের দাগ ও দুটি খালি কার্তুজের খোল দেখে ধারণা করা যায় যে পুলিশ প্রথমে নন্দুদের অত্যাচার করে পরে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে। আরো সমস্যাজনক বিষয় হল এই ঘটনার পর কোনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পরিবারকে দেওয়া হয় না। ২৫ এপ্রিল যখন নন্দুর বাবা তার মৃতদেহটি পান, সেটিতে ততক্ষণে পচন ধরে গেছিল, তা সত্ত্বেও তার ডান কাঁধের কাছে একটি ধারালো কিছুর আঘাতের চিহ্ন ছিল। আপাতদৃষ্টিতে কুঠার জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে সন্দেহ । কিন্তু তার দেহে বুলেটের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। সংঘর্ষস্থলের আশেপাশের অঞ্চলের লোকজনের বক্তব্য অনুযায়ী, সেই রাতে শুধুমাত্র কিছু বিচ্ছিন্ন গুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল, কিন্তু সচরাচর এনকাউন্টারের ক্ষেত্রে যা হয়ে থাকে তেমন গুলি–বিনিময়ের কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। পরিবারের লোকজনের আশঙ্কা যে নন্দুদের ছয়জনকেই ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা করার আগে পুলিশি হেফাজতে রেখে অত্যাচার চালানো হয়। সমস্ত তথ্যপ্রমাণ এবং সাক্ষ্য পুলিশি হেফাজতে অত্যাচার ও পরবর্তী সময়ে হত্যার প্রতি দিকনির্দেশ করে। তা সত্ত্বেও পুলিশের তরফে এটিকে একটি এনকাউন্টারের ঘটনা বলে চালানোর উদ্দেশ্য যথেষ্ট সন্দেহজনক। এই প্রশ্নও ওঠে যে, পুলিশ নন্দু ও বাকিদের ধরার পর আইনমাফিক গ্রেফতার ও কোর্টে পেশ না করে কীভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল। কোরাপল্লি গ্রামে, নিহতদের পরিবার–প্রতিবেশীদের প্রতি স্থানীয় পুলিশ এবং নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর ভীতিপ্রদর্শন এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডগুলি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ওই অঞ্চলে ক্রমাগত চলতে থাকা বৃহত্তর পুলিশি সন্ত্রাসেরই অংশ। ওই অঞ্চলে বিশাল মাত্রায় পুলিশ–ক্যাম্প ও নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতি সর্বক্ষণই এক ভয়ের মহল তৈরি করে রেখেছে। এই বছরের গোড়ার থেকেই সমস্ত পুলিশি হিংসার ঘটনায় এই একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, এই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি, পাখি শিকার করতে যাওয়ার সময় রামকুমার এবং প্রেমলাল নামে কোয়েনভার্সে গ্রামের দুই যুবককে নিরাপত্তারক্ষীরা উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারপর তাদের আলাদা আলাদা করে দীর্ঘ জেরা করা হয় ও চাপ দেওয়া হয় নিজেদেরকে মাওবাদী বলে স্বীকার করতে এবং অস্বীকার করায় তাদের জোর করে আটকে রাখা হয়। সুযোগক্রমে প্রেমলাল কোনোমতে পালাতে সক্ষম হয় এবং ভবিষ্যতে তার মারফতেই পরিদর্শনকারী দল এই ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়। ৬ তারিখে গ্রামবাসীরা যেখান থেকে প্রেমলাল ও রামকুমারকে ওঠানো হয়েছিল সেখানে জমিতে রক্তের দাগ দেখতে পায় ও রামকুমারের পোড়া ভোটের কার্ড ও আগেরদিনের শিকার করা পাখির অবশিষ্ট খুঁজে পায়। এর থেকে তাদের সন্দেহ হয় যে রামকুমারকে হত্যা করা হয়েছে, এবং তারা গড়চিরোলি পুলিশ থানায় খোঁজ করতে গেলে সেখানে রামকুমারের দেহ মেলে। কোয়েনভার্সের গ্রামবাসীদের দাবি এরকম ঘটনা তাদের গ্রামে এই প্রথমবার এবং তাদের উপর পুলিশি চাপ ছিল এই ঘটনায় কোনও মামলা না দায়ের করার। উপরোন্তু , মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাদের ঘুষ দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়। পরিবারের লোকজন হেদারি পুলিশ ক্যাম্পে অভিযোগ নথিভুক্ত করতে গেলে ওই দুই যুবকের সাথে মাওবাদীদের যোগ ছিল এই মর্মে লেখা বিবরণে তাদের বুড়ো আঙুলের ছাপ নিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে এই ঘটনার উপর ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্ত চললেও, পরিবার বা গ্রামবাসীরা তার অগ্রগতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে।
সুরাজগড় অঞ্চলে লয়েড মাইনিং কর্পোরেশন ২০১৬ সালে একটি ঘাঁটি তৈরি করে। লয়েডকে এই স্বত্ব দেওয়ার সময় থেকেই ওই অঞ্চলের লোকেরা এর বিরোধ করতে থাকে, এবং এর পর থেকেই তাদের উপর পুলিশি অত্যাচার বহুমাত্রায় বেড়ে যায়। ধামকুণ্ডবাণী ও সুরাজগড় মাইনের আশেপাশের গ্রামবাসীদের উপর ক্রমাগত হেনস্থা চলতে থাকে ও লোকেদের ধরপাকড় চলতে থাকে । উদাহরণস্বরূপ, প্রথমে মোহুন্দি ও গুদানজুড়ের দুজনকে পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং তারপরে আরো পাঁচজনকে গাত্তা পুলিশ নিয়ে যায়। গ্রামবাসীরা বাধা দিতে চাইলে তাদের উপরেও নির্বিচারে পুলিশি–প্রহার চলে, এখনো অনেকের দেহে সেই আঘাতের চিহ্ন বিদ্যমান। একজনের মাকে পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায় ও মেরে হাত ভেঙে দেয় , মহিলা এখনো স্বাভাবিকভাবে তাঁর হাত ব্যবহার করতে পারছেন না। আটজন লোক যাদের পুলিশ উঠিয়ে নিয়েছিল, তাদের মধ্যে দুই নাবালকসহ সাতজন এখনো পুলিশি হেফাজতে এবং বাকি একজন দীনেশের কোনো খবর খবর পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ দাবি করছে দীনেশ পালিয়েছে, কিন্তু তার পরিবারের আশঙ্কা তাকেও হত্যা করা হয়েছে।
২৯ মার্চ, রেখানার গ্রামের এক তরুণ, নাম সানসু মির্চা উসেন্ডি জঙ্গলে পশুধরার একটি ফাঁদ বানিয়েছিল। ৩০ তারিখ সে সেখানে শিকার ধরা পড়েছে কিনা দেখতে গেলে তাকে পেছন থেকে অতর্কিতে সিআরপিএফ বাহিনী আক্রমণ করে, ও তার উপর অত্যাচার চালিয়ে শেষপর্যন্ত হত্যা করে। ১ এপ্রিল তার পরিবার তার খোঁজ করতে থানায় গেলেও তাদের জানানো হয় না যে সানসু ইতিমধ্যেই মৃত. ৩ এপ্রিল পুনরায় তারা পুলিশ থানায় গেলে তাদের বলা হয় একটি এনকাউন্টারে সানসু নিহত হয়েছে। ৬ তারিখ সকালে পরিবার ও গ্রামের লোকেরা এসপি’র সামনে এই হত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
ধামকুণ্ডবাণী এবং সুরাজগড় খনি অঞ্চল পুলিশি হিংসার কেন্দ্রে রয়েছে। ২০০৬–২০০৭ সালে প্রথমে এই অঞ্চলে খনি গঠনের প্রস্তাব উঠলেও তা স্থানীয়লোকেদের প্রতিবাদে রদ হয়ে যায়। বর্তমানে আবার নতুন করে এখানে বিশাল মাত্রায় পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মজুত করে গ্রামবাসীদের হেনস্থা করা শুরু হয়েছে। মহিলারা এদের ভয়ে বনে যেতে ভয় পান, কারণ এর আগে কিছু ঘটনায় নিরাপত্তাবাহিনী তরুণী মেয়েদের লাঞ্ছনা করেছে ও জোর করে সারারাত ক্যাম্পে আটকে রেখেছে। পুরুষেরা পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যাবার ভয়ে বাজার যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কর্পোরেশন ও পুলিশের চাপের মুখে ঠিকাদারেরা তেন্দুপাতা ও বাঁশ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।
এইভাবে পুলিশের দ্বারা যথেচ্ছ ভাবে গ্রামের লোকদের অপহরণ ও হত্যা এবং এই ঘটনার কোনো বিচারবিভাগীয় তদন্ত না হওয়া, গ্রামবাসীদের মনে যুগপৎ ভয় ও রাগের জন্ম দিচ্ছে। মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় ও ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীদের কাছে ধামকুণ্ডবাণী পাহাড় একটি পবিত্রস্থল। এই পাহাড়ে খননকার্য তাদের পক্ষে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকারক।
তথ্যানুসন্ধানকারী দল তিনদিন ধরে অনেকগুলি গ্রাম ঘুরে ও বহু মানুষের সাথে কথা বলে গড়চিরোলি অঞ্চলের বাস্তবতা জেনেছে। আমাদের কাছে এটি পরিষ্কার যে উন্নয়নের এই নতুন সরকারি নীতিতে স্থানীয় মানুষের ইচ্ছে–অনিচ্ছের কোনো মূল্য নেই। কিন্তু এখানকার মানুষ রাষ্ট্রের নির্মম দমন এবং রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড স্বত্বেও তাদের জমি ও জীবিকার উপর এই হিংস্র আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে রুখে দাঁড়িয়েছে।
এই তথ্যানুসন্ধান রিপোর্ট ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন মঞ্জিরা সিনহা।