গ্রাউন্ডজিরো: মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ১৪ ও ১৫ই এপ্রিল মাঝরাতে দক্ষিণ দিল্লীর মদনপুর খাদারে একটি রোহিঙ্গ্যা রিফিউজি ক্যাম্পে আগুন লেগে যাওয়ায় ২৩০টি ঘর এবং তার মধ্যেকার সমস্ত জিনিসপত্র, জাতিসংঘের জারি করা পরিচয়পত্র, বিশেষ ভিসা, এবং অন্যান্য জুরুরি কাগজপত্র সম্পূর্ণভাবে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই ঘটনার ঠিক দু’দিন আগে বিজেপি আই.টি. সেল স্বরচিত ‘খবর’ প্রচার করে যে রোহিঙ্গ্যা সম্প্রদায় আসিফার ধর্ষণ এবং হত্যার জন্যে দায়ী, এর সাথে তারা দাবি করে যে রোহিঙ্গ্যাদের উদ্দেশ্য জম্মুর জাতিবিন্যাসের রদবদল ঘটানো।
দা ওয়্যার এর রিপোর্ট অনুযায়ী, সিনিয়র অ্যাডভোকেট প্রশান্ত ভূষণ দিল্লী পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলে ভারতীয় জনতা যুবমোর্চার নেতা মনীশ চান্দেলার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। চান্দেলা টুইটারে দাবি করে রোহিঙ্গ্যা ক্যাম্পে আগুন সে নিজে লাগিয়েছিল। তার টুইটার প্রোফাইল @chandela_BJYM থেকে এই টুইটটি করা হয়েছে। টুইটার প্রোফাইল-এর “পরিচয়” অংশে চান্দেলা নিজেকে “হিন্দু জাতীয়তাবাদী গুজ্জার নেতা” বলে দাবি করে।
এই ঘটনার পরেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করেনি।
১৯ এপ্রিল দাখিল করা এই অভিযোগপত্রে ভূষণ দিল্লী পুলিশকে জানান যে চান্দেলার টুইট-এর ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা উচিত। অভিযোগপত্রে ভূষণ লিখছেন,”[চান্দেলা] রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অপরাধ স্বীকার করেছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধরণের কাজ করবে বলে হুমকি দিয়েছে,” এবং তার টুইট-এর মাধ্যমে “সাম্প্রদায়িক ঘৃণা উস্কে দিয়ে শান্তি ভঙ্গ করতে চেয়েছে।”
My criminal complaint against Manish Chandela of BJYM who proudly boasted on social media that he & his associates burnt down the Rohingya camp. No action yet by @DelhiPolice to register case & arrest him & no action by BJP to remove him from party. State of rule of law under BJP pic.twitter.com/aVd8LDSCUO
— Prashant Bhushan (@pbhushan1) April 19, 2018
অভিযোগপত্র দাখিল করার সাথে সাথে তিনি পুলিশকে চান্দেলার টুইট-এর স্ক্রিনশট-ও পাঠিয়েছেন । ভূষণ বলেছেন, “টুইট-এর মাধ্যমে [চান্দেলা] রোহিঙ্গ্যা ক্যাম্প জ্বালানোর দাবি করে। পরে সেই টুইট যদিও ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রমাণস্বরূপ সেটি একটি আর্কাইভ থেকে পাওয়া গেছে।”
ভূষণ বিবৃতি দিয়েছেন কেমন করে বারবার রোহিঙ্গ্যাদের বিরুদ্ধে হেট ক্যাম্পেইন চালিয়ে গেছে চান্দেলা। ১৫ এপ্রিল রোহিঙ্গ্যা ক্যাম্পে আগুন লাগার খবর পেয়ে চান্দেলা এস. মেননের টুইট করা মন্তব্যকে “রি-টুইট”করে, যে জম্মুর জাতিবিন্যাসের রদবদল ঘটানোর উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের রিফিউজিরা কাঠুয়ার নৃশংস ধর্ষণকান্ড ঘটায়, কাজেই তাদের দ্বীপান্তরিত করা জরুরি। যখন টুইটের মাধ্যমে একজন এই ঘটনার জন্য শোক প্রকাশ করেন তখন চান্দেলা কমেন্ট করে “Well done by our heroes”। এই কমেন্ট থ্রেড-এ যখন একজন জিজ্ঞেস করে এই সাবাসি কিসের জন্যে তখন চান্দেলা কমেন্ট করে “হ্যাঁ, আমরাই রোহিঙ্গ্যা সন্ত্রাসবাদীদের বাসস্থান জ্বালিয়েছি।”
I have both the SS. One of Sanghi was advising him to delete the tweet @kapsology pic.twitter.com/IxBG6XlcWj
— Karwan (@IamKarwan) April 17, 2018
এর পর ১৬ এপ্রিল চান্দেলা টুইটারে “হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইন” চালায় “রোহিঙ্গ্যা ভারত ছাড়ো” এবং লেখে “হ্যাঁ আমরা করেছি এবং আবার করবো।” ১৭ এপ্রিল সে আবার টুইট করে “ভারতের যেকোনো জায়গায় যদি রোহিঙ্গ্যাদের অবৈধ বাসস্থান থাকে তাহলে আমাদের জানান। আমরা ওদের যথাস্থানে পাঠাবো”।
প্রশান্ত ভূষণ অভিযোগে জানান চান্দেলা যা করেছে, আইপিসি-র ধারা অনুসারে সেটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ, তাই তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা উচিত। তাছাড়া তার এই রোহিঙ্গ্যা ক্যাম্প জ্বালানোর দাবির ফলস্বরূপ, “আগুন এবং বিস্ফোরক দ্বারা সম্পত্তির বা মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত বিল্ডিং, ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যপ্রকাশের অপরাধে সে অপরাধী।” ভূষণ জানান চান্দেলার বিরুদ্ধে পুলিশের এফআইআর করা জরুরি, “যাতে তাকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে রোহিঙ্গ্যাদের বিরুদ্ধে গুজব এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা, শত্রুতা এবং সম্ভাব্য হিংসার প্ররোচনা জোগানোর থেকে বিরত করা যায়।”
দিল্লী পুলিশের মুখপাত্র দিপেন্দ্র পাঠক সরকারিভাবে জানান, তদন্তকারীরা টুইটের উৎস স্থাপন করতে পারলে পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু ১৯ এপ্রিল প্রশান্ত ভূষণ এবং AIMMM-এর অভিযোগপত্র দাখিল করার পরেও পুলিশ অভিযুক্তর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এদিকে ২০ এপ্রিল দিল্লীর বিজেপি মুখপাত্র, হরিশ খুরানা টুইটের মাধ্যমে জানান যে চান্দেলা আসলে ভারতীয় জাতীয় লোক দলের (INLD) সদস্য। এবং ২১ এপ্রিল ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার (BJYM) সভাপতি, সুনীল যাদব টুইটের মাধ্যমে জানান মনীশ চান্দেলা তাঁদের দলের সদস্য নয়। তিনি এও বলেন যে দিল্লী পুলিশ কমিশনারের কাছে তিনি অভিযোগ জানিয়েছেন যে ভূষণ মিথ্যে প্রচারের দ্বারা তাঁদের দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
Mr. Bhushan first of all he is not the member of @BJYM .U can see the proof. He is member of INSO.
Since last few days such conspiracy happening to defame @BJP4India & it seems u r also part of it.@timesofindia @indiatvnews @TOIIndiaNews @TOIDelhi @ManojTiwariMP @SunilYadavBjp pic.twitter.com/SkLwU3E5Go— Harish Khurana (@HarishKhuranna) April 20, 2018
आज दिल्ली पुलिस कमिश्नर को लिखित निवेदन किया कि #ManishChandela के ट्वीट और उसके पश्चात कुछ लोगों की साम्प्रदायिक सोहाद्र खराब करने, #BJYM को बदनाम करने एवं #SaffronTerror का झूठा प्रचार करने की कोशिश की जांच की जाए।@ZeeNewsHindi @ZeeNews @abpnewstv @IndiaToday @ManojTiwariMP pic.twitter.com/YR19FXGoXc
— Sunil Yadav (@SunilYadavBjp) April 21, 2018
কাঠুয়া কাণ্ডের পরে দেশ জুড়ে হিন্দু একতা মঞ্চ-র মতো বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী দল এবং বিজেপি-আরএসএস-এর বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ তৈরী হচ্ছে, সেই ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করতে রোহিঙ্গ্যাদের বিরুদ্ধে ‘ফেক নিউজ’ ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি আইটি সেল। প্রশান্ত ভূষণ তাঁর দাখিল করা অভিযোগপত্রে বলেছেন, “এই মিথ্যা খবর ছড়ানোর প্রভাব বিশেষ করে রোহিঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে। এঁরা সমাজের সম্পূর্ণ প্রান্তসীমায় রয়েছেন এবং দেশের অনেক অঞ্চলেই শোচনীয় এবং অমানবিক ক্যাম্পে বসবাস করেন।”
সারা বিশ্ব জুড়ে যখন ‘রিফিউজি ক্রাইসিস’ নিয়ে কথা চলছে এবং নিউজিলান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে এবং কানাডা -র মতো দেশগুলি ছাড়াও অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল বিভিন্ন দেশ, যেমন রুয়ান্ডা, মালি, সিরিয়া লিওন-এ তাদের জাতীয় নীতি ও আইন কাঠামোয় রিফিউজিদের আশ্রয় দেওয়ার বিধিনির্দেশ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সেখানে রেফিউজি-দের জন্যে ভারতের কোনো আইনি কাঠামো বা রিফিউজি নির্ণয়কারী ব্যবস্থা (National Refugee Determination System) নেই। তাছাড়া UNHCR রিপোর্ট অনুসারে বিশ্বের ৮৪% রেফিউজি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি দ্বারা আশ্রিত। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গ্যা রিফিউজিদের আশ্রয় না দিতে পারার কারণ শুধু অর্থনৈতিক নয়। প্রচারিত মাধ্যমে রোহিঙ্গ্যা রিফিউজিদের আশ্রয় না দিতে পারার কারণ একদিকে যেমন অর্থনতিক অক্ষমতা দেখানো হয়েছে অন্য দিকে ভারতের বিজেপি সরকার রোহিঙ্গ্যা রিফিউজিদের প্রতি অসহিষ্ণুতা প্রচার করে চলেছে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জম্মুতে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্স-এ বলেন রোহিঙ্গ্যা রিফিউজিরা “দেশের নিরাপত্তার জন্যে বিপদজনক” এবং তারা দেশের “সীমিত সম্পদের” উপর বোঝাস্বরূপ। চান্দেলার ভাবাদর্শ সেই হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের প্রতিচ্ছবি। এরকম মুসলিম বিদ্বেষী – সংখ্যালঘুবিরোধী নীতি ব্যবহার করেই মায়ানমারের শাসক গোষ্ঠী এবং সামরিক বাহিনী ‘আরাকান স্টেট’-এ রোহিঙ্গ্যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালায়। জাতিসংঘের বক্তব্য অনুযায়ী এটি একটি ‘গণহত্যা’। বিভিন্ন দেশের প্রধানেরা যখন মায়ানমার সরকারের এবং স্টেট কাউন্সেলর আং সান সু চি-র নিন্দা করছেন, সেই সময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মায়ানমার ভ্রমণে গিয়ে জানান যে তিনি মায়ানমার সরকারের সাথে আছেন।