সৌজন্য : নিউজক্লিক
গ্রাউন্ডজিরো: আবার গো-রক্ষকদের তাণ্ডব। এবার ঝাড়খণ্ডের কোডারমা জেলার নওয়াদি গ্রামে। বিয়ে বাড়িতে গো-মাংস খাওয়া হয়েছে এই ধুয়ো তুলে আক্রমণ শানানো হল বরের বাড়িতে। চলল মুসলমান গ্রাম জুড়ে ভাঙচুর আর লুঠপাট।
১৭ মার্চ ডোমচাঁচ থানার নওয়াদি গ্রামের জুম্মান মিয়াঁর ছেলের বিয়ের ভোজপর্ব ছিল। অভিযোগ ১৮ মার্চ বজরঙ দলের এক স্থানীয় নেতার নেতৃত্বে প্রায় হাজার খানেক জনতা জুম্মান মিয়াঁর বাড়ি ও গ্রাম ঘিরে ফেলে। তাদের দাবি, জুম্মানের বাড়ির পিছন থেকে গরুর খুর পাওয়া গিয়েছে। গ্রামবাসী আসিফ আনসারির অভিযোগ, ‘জয় শ্রীরাম’, ‘সারে মুল্লাঁ কো কাট ডালো’ শ্লোগান দিতে দিতে প্রায় হাজার খানেক লোক গ্রামে ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালায়। তিনি জানান, আক্রমণকারীদের উদ্দেশ্যই ছিল সন্ত্রাস সৃষ্টি করে মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা। নওয়াদি গ্রামে মাত্র ৬০টি মুসলমান পরিবার বসবাস করে। হিন্দু প্রতিবেশীরর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।
আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুসলমানদের ৩০টি বাড়ি। উন্মত্ত জনতা ১৭টি বাইক, একটি বোলেরো, একটি গাড়ি ও একটি টেম্পো ভাঙচুর করে। আক্রান্ত হয় ধর্মীয় স্থান। ধর্মীয় পুস্তক নষ্ট ও অবমাননার অভিযোগও উঠেছে। আক্রমণে জুম্মান ও প্রতিবেশী ইজরায়েল আনসারি আহত হন। গুরুতর আহত ইজরায়েলকে রাঁচির রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রামের বাসিন্দা লিয়াকত আলির ছেলে আসলাম রাজার বিয়ে ছিল আগামী ১১ মে। তাঁর বাড়িও আক্রান্ত হয়। লিয়াকত সংবাদসংস্থার প্রতিনিধিকে কাঁদতে কাঁদতে জানান, তাঁর এক ছেলে কলকাতায় কাজ করে। মাসে রোজগার ৮০০০ টাকা। বিয়ের জন্য তিলতিল করে জমানো আর মহাজনদের থেকে ধার করা টাকা লুঠ হয়ে গেছে। লুঠেরারা আলমারি ভেঙে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা এবং ৬০ হাজার টাকা মূল্যের গয়না নিয়ে গিয়েছে।
কোডারমার পুলিশ সুপার শিবানী তেওয়ারি জানিয়েছেন, এই ঘটনায় সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আক্রমণকারীদের পরিচয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি পুলিশ সুপার। তিনি আক্রান্তদের কাছেই আক্রমণকারীদের খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
বিগত চার বছর ধরে সারা দেশ জুড়ে, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যে গো-রক্ষকরা মুসলমান ও দলিতদের উপর লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ঝাড়খণ্ড তার ব্যতিক্রম নয়। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ঝাড়খণ্ডে গো-মাংস খাওয়ার অভিযোগে এক ১২ বছরের কিশোর সহ দু’জনকে গাছে লটকে ফাঁসি দেয় হিন্দুত্ববাদীরা। ২০১৭ সালের জুন মাসে রামগড় জেলায় গাড়িতে করে গো-মাংস পাচার করার অভিযোগ তুলে আলিমুদ্দিন আনসারিকে হত্যা করে গো-রক্ষকরা। এই ঘটনায় অবশ্য এক বিজেপি নেতা এবং তিন গো-রক্ষক সমিতির সদস্য সহ ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে রামগড় ফাস্ট ট্রাক কোর্ট। গো-তাণ্ডবে এটিই প্রথম ও একমাত্র শাস্তির ঘটনা।