ডঃ অমিতাভ আইচ
কোন কিছুর অভিমুখ যখন জৈবিক প্রকৃতির বিশুদ্ধতা, স্থায়িত্ব ও সৌন্দর্য সংরক্ষণের দিকে হয়, তখনই তা সঠিক হয়ে ওঠে। ভুল হয় যখন অভিমুখ বদলে যায়।”
দ্য স্যান্ড কাউন্টি আলম্যানাক এন্ড স্কেচেস হিয়ার এণ্ড দেয়ার, আল্ডো লিওপোল্ড, পৃষ্ঠা ২৬২।
কথা হচ্ছিল অধ্যাপক (ড:) অমলেশ চৌধুরীর সঙ্গে। উনি বলছিলেন, ম্যানগ্রোভ নিয়ে চারিদিকে এখন হইহই প্রচুর বেড়েছে। অনেক এনজিও, অনেক সংগঠন, অনেক অর্থ। পৃথিবীর তাবৎ পরিবেশ সংগঠন এখন সুন্দরবন নিয়ে উৎসুক। তা সত্ত্বেও, ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ক্ষয়, মিষ্টি জলের হ্রাস, দিনে দু’বার জোয়ারের জলে ডুবে যাওয়া আর কাদামাটিরর জমি, সেখানে বসবাসকারী অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবকুল – যা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে – এমনকী যাদের বিচরণের ক্ষেত্রের অনেক কিছুই আজও অজানা রয়ে গেল, সেই সব নিয়ে ক্রমাগত কাজ করে যাওয়ার জন্য কোনও সমন্বয়গত প্রয়াস আজও নেই। যেন আড়ম্বরই বেশি, উপাদান বড়ই সীমিত ও একমাত্রিক।
আমি চুপ করে শুনতে থাকি। বলতে পারি না, প্রচার ও পেপার (গবেষণা পত্র) সর্বস্ব এই দুনিয়ায় ধ্রুপদী পরিবেশ গবেষকরা বড় একা হয়ে পড়েছেন। কথায় কথায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা উঠল। বললেন, ‘কয়লা রেলের মাধ্যমেও পাঠানো যায়। এমনিতেও ভারত-বাংলাদেশ নদী বাণিজ্য পথের অনেকটাই সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে হওয়ার ফলে অরণ্যে তার কুপ্রভাব পড়েছে। এটা ভয়ানকভাবে বাড়বে।’ খুব ছোট ও তাৎপর্যপূর্ণ কথা। কিন্তু ভাবছিলাম, কিন্তু সবাই যদি বিষয়টা এভাবে বুঝত বা আদও বুঝত।
প্রশ্ন হল বোঝার আছেটা কী? কী রামপাল? যদি এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশে হয়, তবে ভারতের মানুষের মাথাব্যথা কেন? আর এই যে, ধান ভানতে শিবের গীতের মতো ম্যানগ্রোভ, ম্যানগ্রোভ করছি, তারই বা কী গুরুত্ব। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে তার কীসের সম্পর্ক, কীসের-ই বা সংঘাত? এ সবই আলোচনা করব এখানে।
সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্য
গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার সুবিশাল মোহনায় বিপুল পলির সঞ্চয়ে গঠিত এই বদ্বীপীয় স্থলভাগের পরিমাপ ১০২০০ বর্গ কিলোমিটার। এই স্থলভাগ শুধু পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চলই নয়, সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বা লবণাম্বু উদ্ভিদের অরণ্য এবং অনন্য জীব কুলে ভরপুর এক বহুমাত্রিক বাস্তুতন্ত্র। এই বাস্তুতন্ত্র শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট জনপদকে সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে না, বিপুল পরিমাণ অনুখাদ্যের এবং বনাঞ্চলের জটিল ও বহুমাত্রিক খাদ্যশৃঙখল সৃষ্টির মাধ্যমে খাঁড়ি ও তীরবর্তী সমুদ্রের মাছের যে বিপুল সম্পদ রয়েছে তাকে ধারণ করে। মাছ ও মাছ ধরা শুধু সুন্দরবন নয়, সমগ্র উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রর একটি । আর যার পূর্বভাগের একটি বিরাট অংশ শুধু সুন্দরবন থেকে তৈরি অনুখাদ্যের উপর নির্ভরশীল। আমরা সকলেই জানি, সুন্দরবন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ ভূমি বলে বিখ্যাত। মোটামুটি ভাবে দুই বাংলা মিলিয়ে বাঘের সংখ্যা টায়-টায় ২০০-তে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় সুন্দরবনে সংখ্যাটি ৮৭। বাঘ, কুমীর, পাখি, মাছ, বাদাবন এই নিয়ে সুন্দরবন। এই প্রচলিত ধারণার বাইরে ঢাকা পড়ে থাকে এক আশ্চর্য জীবজগৎ। আমরা জানতে পারি না, এনাডারা বলে এক আশ্চর্য ঝিনুকের কথা, যার রক্তের রঙ লাল। আরও এক অতি আশ্চর্য ঝিনুক ম্যাকমা। যে কাদার ভিতরে আত্মগোপন করে থাকে আর খাদ্য আহরণ করে দু’টি কমলা রঙের সাইফন বা নল দিয়ে। আমাদের নজরে আসে না, পিস্তল চিংড়ি, মাডস্কিপার বা ডাফুর মাছ। কাদার মধ্যে বাস করে বেহালা কাঁকড়া, টেলিস্কোপের আকৃতির শামুক টেলিস্কোপিয়াম, লুপ্তপ্রায় গ্লাস এনিমোন বা সাগর কুসুম, সাগর লেখনী বা সি-পেন, ইকিউরাস, সাইপানক্যুলাস। আমাদের দৃষ্টির আড়ালে থাকা এই এক বিপুল জীবজগৎ জলদূষণ, তেল দুষণ এবং জনবসতির চাপ সামলাতে না পেরে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। হারিয়ে যেতে থাকা এই প্রজাতির সঙ্গে সঙ্গে গোটা সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র চলে এসেছে বিলুপ্তির কিনারায়। যার ফল অতি ভয়ানক প্লাবন এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়। ইউনেস্কো এই সব কথা মাথায় রেখেই বাঙ্গলাদেশ স্থিত সুন্দরবনের ৬০ শতাংশ ভূভাগের একটি বড় অংশকে, ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি বিশ্ব ঐতিহ্যপূর্ণ কেন্দ্র বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার-এর (ডব্লিউএইচসি) মর্যাদা দিয়েছে। একই সঙ্গে ভারতের আর প্রায় চল্লিশ ভাগ অঞ্চলে ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে গঠিত হয়েছে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, যার মধ্যে রয়েছে একাধিক অভয়ারণ্য ও সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্ক যা একটি টাইগার রিজার্ভ, এটিও একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার। একই ভাবে ১৯৯২ সালে জলাভূমি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন রামসার সুন্দরবনকে আন্তর্জাতিক মানের জলাভূমি বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর এর ফলেই সুন্দরবন আর স্রেফ কোনও একটি বা দু’টি দেশের সীমানার মধ্যে অবস্থিত ভৌগলিক অঞ্চল নয়। বরঞ্চ, এই আশ্চর্য ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল এ পৃথিবীর এক মহৎ সম্পদ, সেটাই সবচেয়ে বড় সত্য।
রামপাল
বাংলাদেশের খুলনা জেলার রামপালে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা পসুর নদীর তীরে বাংলাদেশ সরকার ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিশেষ চুক্তি অনুযায়ী এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে, ভারতের এনটিপিসি ও বাংলাদেশের বিপিডিপি র মিলিত সংস্থা বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। চুক্তি অনুযায়ী এই প্রকল্পের কারিগরি সহয়তা দেবে ভারতের এনটিপিসি ও ভেল। মূল আর্থিক অংশীদার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এক্সিম ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। যারা ইতিমধ্যে ১.৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
সমস্যা কোথায়?
সমস্যা হল যে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার এবং ডব্লিউএইচসি’র থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে। ভারতের বন ও পরিবেশ দপ্তর বলছে যে, কয়লাচালিত কোনও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কোনও সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রের ২৫ কিলোমিটারের ভিতর করা যাবে না। এই জাতীয় কোনও প্রকল্প তাই ভারতে রূপায়ণ করা যেত না। অথচ, ভারতের-ই সরকারি সংস্থা, তার প্রতিবেশী দেশে একইরকম সংবেদনশীল বাস্তুতান্ত্রিক অঞ্চলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলতে সহায়তা করছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনা ভারত সরকার এবং ভারতীয় সংস্থাগুলির পরিবেশগত মূল্যবোধ বা এনভায়রনমেন্টাল এথিকস নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
এই পরিবেশগত প্রশ্নে নরওয়ের সরকারি সংস্থা জিপিএফজি (Norwegian Government Pension Fund Global) শুধুমাত্র এই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়নি, তারা এনটিপিসি-কে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। একই ভাবে তিনটি বৃহৎ ফরাসি ব্যাঙ্ক প্রকল্পের ব্যয়ভার গ্রহণে তাদের অক্ষমতার কথা জানিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ, এই দাঁড়াল যে, পরিবেশগত ত্রুটি ও ভারসাম্য নষ্টের ভয়ে এবং মূল্যবোধের কারণ দেখিয়ে যেখানে প্রথম বিশ্বের দেশগুলি পিছিয়ে গিয়েছে, সেখানে ভারত সগর্বে যুক্ত হয়ে পড়েছে। এবং একথা জেনেই যে, সুন্দরবনের ৪০ শতাংশ এ দেশে অবস্থিত। আশ্চর্যের বিষয়, কয়েকটি ছোট-খাট প্রতিবাদ ছাড়া, রাজ্যবাসী কিংবা সরকারের এ বিষয়ে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ, এই প্রকল্প সমগ্র সুন্দরবনকেই প্রভাবিত করবে।
কী ক্ষতি, কীভাবে ক্ষতি
বাংলাদেশ বলছে, এ প্রকল্পে তারা অত্যাধুনিক সুপার আল্ট্রা ক্রিটিকাল টেকনোলজি ব্যবহার করবে। এই কারিগরি সহায়তা দেবে ভেল। (সংস্থার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই টেকনোলজি এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্তরে রয়েছে।) একটি হিসাব কষে দেখা গিয়েছে, এই সুবিশাল বিদ্যুকেন্দ্র ৪.৭ মিলিয়ন টন কয়লা পোড়াবে, যার থেকে ৭.৯ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড এবং ২২০ রকমের বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হবে। এবং তা বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে। এর মধ্যে রয়েছে পারদ ও ছাই। যতই তারা ইএসপি বা ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক প্রিসিপিটেটর বা তাপ নিরোধক ফ্রেবিক ফিল্টার বা ব্যাগ হাউস ফিল্টারের মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার কথা বলুক না কেন, পৃথিবীর কোনও তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প পারদ ও ছাইয়ের দূষণ রোধ করতে পারেনি। এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট আসেসমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, রামপাল প্রকল্পে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল টেকনোলজির পরিবর্তে সুপার ক্রিটিকাল ইএসপি ও ব্যাগ হাউস ফিল্টারের বদলে ইএসপি-র কথা বলা আছে। পরবর্তী কালে চাপের মুখে কারিগরি বদল হবে কি না, তা এক রহস্য।
এই বিদ্যুকেন্দ্রে প্রতিদিন প্রয়োজন হবে বিপুল কয়লা। সেই কয়লা পরিবহনের জন্য বাড়াতে হবে নদীর নাব্যতা। বঙ্গোপসাগরের মুখ থেকে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলমিটার দীর্ঘ নদীপথে ড্রেজিং করতে হবে। এর ফলে ৩৪ মিলিয়ন কিউবিক মেট্রিক টন পলি উঠে আসবে। ড্রেজিংয়ের ফলে জলে যে ঘোলাটে ভাব (Turbidity) সৃষ্টি হবে, তার জন্য ফুলকা বুজে গিয়ে (Gill clogging ) মারা পড়বে অধিকাংশ জলের জীব ও মাছ। জলের নিচ থেকে উঠে আসবে অকর্মণ্য হয়ে পড়ে থাকা বিষাক্ত পদার্থ, যেমন ভারি ধাতু। পাশাপাশি, পারদ, উড়ে আসা ছাই ও বিষাক্ত পদার্থ জল, মাটি, কাদায় ছড়িয়ে পড়বে। আর এই সবের মিলিত প্রভাবে ধ্বংস হতে থাকবে বাস্তুতন্ত্র। বিপর্যস্ত হবে খাদ্যশৃঙখল। ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদকে যা খাদ্য ও শক্তি যোগায়। ঘনিয়ে আসবে অরণ্যের অপমৃত্যু।
ম্যানগ্রোভদের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে পৃথিবীর অন্যতম প্রকৃতি সৃষ্ট সুরক্ষা প্রাচীর এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সমুদ্রের আচমকা গ্রাসে হয়তো তলিয়ে যাবে সুন্দরবন ও দক্ষিণবঙ্গের বিপুল অংশ। হয়তো ধ্বংসই হয়ে যাবে বাংলাদেশ।
কী বলছে ইউনেস্কো?
ইউনেস্কো প্রথম থেকেই বলে আসছে, প্রকল্পটি সুন্দরবনের মতো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। বাংলাদেশকে তারা এ কথা বলেও সতর্ক করেছে যে, প্রকল্পের কাজ যদি তারা দ্রুত বন্ধ না করে তবে সুন্দরবনকে, ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এট ডেঞ্জার’, বিপজ্জনক তালিকা ভুক্ত করবে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পরিবেশবিদ, বিদ্দ্বজ্জন এবং বিশেষ করে তেল, গ্যাস,খনিজ, শক্তি বিষয়ক জাতিয় কমিটি ও Save the Sundarbans নামক পরিবেশ বাদী সংস্থা গুলি অনেকদিন ধরেই লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে এবং জনমত তৈরির চেষ্টা করে চলেছে। যার জের ইউনেস্কোর দরজা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে দেরি হয়নি। বাংলাদেশ সরকার এর পর ইউনেস্কোর সঙ্গে দর কষাকষি শুরু করে। এর বড় কারণ, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার থেকে বাংলাদেশ বড় অনুদান পেয়ে থাকে। যা কেউ হাতছাড়া করতে চায় না। সম্প্রতি ২ মে ২০১৭, পোলান্ডের ক্যাকোয়াতে ইউনেস্কো-ডবলিউএইচসি’র বিশ্ব সম্মেলনে, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় যে, কী ভাবে দূষণ এড়িয়ে এই প্রকল্প বাংলাদেশ গড়বে, যার ফলে সুন্দরবনের কোনও ক্ষতি হবে না, তার একটি স্ট্রাটেজিক একশন প্ল্যান যেন তারা জমা করে। এবং সেই কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগে যেন তারা প্রকল্পের কোনও প্রকার কাজ না করে।
পরিশেষ
বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নের নামে কর্পোরেট, মুনাফা আর ভোট সর্বস্ব রাজনীতির মিলমিশের ফলে একটি একমাত্রিক পরিণতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উন্নয়নের দোহাই দিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার ও লুঠ চলছে। প্রতিবাদ হলেই প্রতিবাদকারীদের গায়ে রাজনৈতিক রঙ লাগানো, অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দেওয়া আর বার বার বোঝানোর চেষ্টা চলে, সরকার কত প্রকৃতি সচেতন এবং গরিব মানুষের বন্ধু। ইউনেস্কোর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও, সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার প্রকল্পের কাজে লাগাম টানেনি। উল্টে সে দেশের মন্ত্রী-আমলারা সগর্বে প্রচার করছে যে, তারা ইউনেস্কোর ছাড়পত্র যোগাড় করে ফেলেছে। পাশাপাশি চলছে, প্রকল্প বিরোধীদের ভয় দেখানো, শারীরিক আক্রমণ।
বড় প্রতিবেশী হিসাবে ভারতকেই এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। ভারতের উচিত অবিলম্বে রামপাল প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়া অথবা এমন এক কোনও স্থানে প্রতিস্থাপন করা, যেখানে সুন্দরবনের উপর কোনও খারাপ প্রভাব পড়বে না। এখনই যে হিসাব কষা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পের খরচ এতটাই বেশি হবে যে, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামও তুলনামূলক ভাবে বেশি হবে।
ভারত ও বাংলাদেশের কাছে বর্তমান বিনিয়োগের মাধ্যমেই একটি বহুমাত্রিক নবীকরণযোগ্য (Renewable and Nonconventional) শক্তি প্রকল্প স্থাপনের এক অসাধারণ সুযোগ রয়েছে। যা হবে, বিশ্বে বৃহত্তম, সস্তা ও পরিবেশ বান্ধব। এবং ভঙ্গুর পরিবেশের কোনও ক্ষতি না করে উন্নয়নের মডেল হয়ে থাকবে। আমাদের সমস্ত দাবিদাওয়া ও লক্ষ্য সম্মিলিত ভাবে এই শেষোক্ত পথেই হওয়া উচিত।
(লেখক পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষক ও সুন্দরবন বিষয়ক গবেষক)
[…] ম্যানগ্রোভ বনাম রামপাল তাপবিদ্যুৎ কে… […]